মাঙ্গলিক দোষ কাটান

মাঙ্গলিক দোষ কাটাবেন কীভাবে ?

মাঙ্গলিক বা ভৌমদোষ

জন্মরাশিচক্রে মঙ্গলের অবস্থান অনুসারে মাঙ্গলিক দোষের সৃষ্টি হয় | মঙ্গল হল এই দোষের কারক | মঙ্গলের স্বরূপগত পরিচয় কী ? মাঙ্গলিক দোষ কী ? এই দোষ মানুষের জীবনে কী প্রভাব বিস্তার করে ? দোষমুক্তির পথই বা কী ? প্রশ্নগুলি মনের মধ্যে জিজ্ঞাসার জাল বোনে |

মঙ্গলের প্রকৃতিগত পরিচয়

রবি চন্দ্র ছাড়া যে গ্রহটি পৃথিবীর বুকে সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার বা কার্যকরী তার নাম মঙ্গল |

ফলিত -জ্যোতিষ এবং পুরাণে মঙ্গল হলেন দেবসেনাপতি | পাশ্চত্য জ্যোতিষেও তিনি যুদ্ধ দেবতা | কী ভাবে সৃষ্টি হলেন মঙ্গল |

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে আছে – ভগবান নারায়ণ মলয়গিরি প্রদেশে একাকী অবস্থান করছিলেন | স্থানটি নির্জন আর অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভাযুক্ত হাওয়ায় তা ভগবানের প্রিয় | সেই সময়  শ্রীভগবানের সৌন্দর্য দর্শনে পৃথিবীদেবীর মনে প্রবল কামনার উদয় হল | তখন তিনি পূর্ণযৌবনা সুন্দরীর বেশে হাসিমুখে শ্রীভগবানের শয্যার উপর উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে শৃঙ্গারে মিলিত হলেন | কিন্তু নারায়ণের অমোঘ তেজ ধারণ করে পৃথিবীদেবী অজ্ঞান হয়ে গেলেন |

মঙ্গলের স্বরূপ

জ্যোতিষ মতে মঙ্গলের স্বরূপ – দেবসেনাপতি , খৰাকৃতি, রক্তচক্ষুদ্বয় , দৃঢ় দেহ , রজ:কান্তি বর্ণ , চঞ্চলভাব , কুঞ্চিত দীর্ঘকেশ , পিত্ত প্রকৃতি , অগ্নিতত্ত্ব, অগ্নিস্থান আর গ্রীষ্মঋতুকারক |

মাঙ্গলিক বা ভৌমদোষ কী ?

ভৌমদোষের আবিষ্কার আধুনিক কালের নয় | স্বামী-স্ত্রীর হানিকারক বলে প্রাচীন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে |

এই মঙ্গল দোষের অনেকগুলি নাম আছে – অঙ্গারক দোষ , কুজদোষ, ভৌমবর্তী দোষ , মাঙ্গলিক দোষ ইত্যাদি | তবে বর্তমানে সবথেকে প্রচলিত নামটি হল ‘মাঙ্গলিক’ |

জন্মরাশিচক্রে মঙ্গল লগ্ন , দ্বিতীয়, চতুর্থ , সপ্তম, অষ্টম আর দ্বাদশ স্থানের কোনও একটিতে অবস্থান করেন তাহলে ভৌমদোষের সৃষ্টি হয় |

বর্তমানে কোনও কোনও জ্যোতিষী মনে করেন ভৌমদোষ ভয়ানক অমঙ্গলকারী | যেমন দারিদ্র দোষকারক , প্রতিপদে ভাগ্যন্নতিতে বাধার সৃষ্টি করে , শত চেষ্টা আর অমানুষিক পরিশ্রম করেও সঠিক ফল লাভ হয় না ….. ইত্যাদি |

সাধারণের মনে ‘মাঙ্গলিক ‘ জাতক / জাতিকাদের নিয়ে একটা ভয়ঙ্কর ভীতি আর চিন্তা থাকে | বিশেষ করে কন্যা মাঙ্গলিক হলে তো আর কথাই নেই – যেন শিয়রে শমন, মানসিক দিকটা ক্ষতবিক্ষত করে তোলে | বিবাহের বিষয়ে ভীতির সৃষ্টি করে | বিবাহ জীবন সুখের হবে তো | স্বামী /স্ত্রীর অকালমৃত্যু হবে না তো | এই রকম আরো কিছু ভাবনা | আবার ভৌমদোষ থেকেও অনেকে বিধবা হন না |

মাঙ্গলিক দোষ কাটান 2

জ্যোতিষশাস্ত্রে ভৌমদোষ

মহাকবি কালিদাস রচিত ‘ জাতকচন্দ্রিকা’ গ্রন্থে লগ্ন , দ্বিতীয়, চতুর্থ , সপ্তম, অষ্টম আর দ্বাদশে মঙ্গলের অবস্থানকে ভৌমদোষের প্রতি প্রসব বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে | অর্থাৎ এই ছয় স্থানে মঙ্গল দোষকারক মনে করা হয় | তবে এই বিচার শুধুমাত্র লগ্ন থেকে নয় , চন্দ্র আর শুক্র থেকেও ঐ ছয় স্থানে মঙ্গলের ভৌমদোষের বিচার করতে হয় |

ভৌমদোষ বা মাঙ্গলিক দোষের অন্তরালে

মঙ্গলগ্রহ নামে মঙ্গল হলেও কাজে ততটা মঙ্গলকারক নয় | জাতক জাতিকার জন্মকুন্ডলীর যে স্থানে মঙ্গল অবস্থান করে সেই স্থানের শুভফলের হানি করে , ক্রমাগত বাধাদান করে | তুঙ্গস্থ মঙ্গলও অশুভ ফলপ্রদান করে | এর কারণ মঙ্গলগ্রহ অতি তপ্ত ও অতিমাত্রায় শুষ্ক | রবির কাছাকাছি অবস্থান এবং রক্তবর্ণের জন্য মঙ্গলের প্রকৃতি তীব্র , উষ্ণ আর অগ্নি প্রধান |

মঙ্গল দুটি ভাবের মাধ্যমে তার গুণ বা কারকতা প্রকাশ করে | প্রথমটি হল বীরভাব ; অপরটি পশুভাব | মঙ্গলের বীরভাবের প্রকাশ ক্ষেত্রগুলি হল – সত্য সাধনা , অফুরন্ত কর্মশক্তি , স্থির ধৈর্য , সাহস , সংযম , প্রবলবিক্রম আর ক্ষিপ্রতা , স্বাধীনচেতাভাব , আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য বীরত্ব প্রদর্শন , গর্ব, উদ্যম , জীবনীশক্তি , সাংগঠনিক ক্ষমতা , তীক্ষ্ণ বুদ্ধি , সুগঠিত পেশী , রজোদীপ্ত চেহারা , দাম্ভিকতা , সামরিক প্রতিভা ও নিপুণতা , যন্ত্র- বিজ্ঞানী , রসায়নবিদ , কূটতার্কিক ভ্রাতৃত্বভাব , উৎসাহ -উদ্দীপনা প্রভৃতি |

বিবাহের বিচারের সময় মঙ্গলের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ | মঙ্গলের প্রভাবেই বিবাহ হয় | অন্যথায় বিপরীত ফল হবে | মঙ্গল থেকেই বিচার হয় দম্পত্তির আয়ু , দাম্পত্যজীবনের শান্তি-অশান্তি , পতি/ পত্নীহীন , কন্যার বৈধব্য যোগ | শুধু তাই নয় , চন্দ্র আর মঙ্গল থেকে মেয়েদের ঋতু আবর্তের দোষগুণ  বিশেষভাবে সম্পর্ক যুক্ত | এর ওপরই নির্ভর করে সন্তানপ্রাপ্তি |

কোন অবস্থানে মঙ্গলের ভৌমদোষের ফল কী ?

দাম্পত্য জীবনের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর স্থান হল মাঙ্গলিক বা ভৌমদোষে চিহ্নিত স্থানগুলি |

যেমন, লগ্ন রাশিচক্রে এই স্থানটির দ্বারা বিচার করা হয় জাতক জাতিকার জীবনের গতি কেমন হবে , প্রকৃতিগত দোষগুণ প্রভৃতি |

দ্বিতীয় স্থানটির গুরুত্ব আবার অন্যদিকে থেকে | এই স্থানের বিচারে জানা যায় কুটুম্বভাগ্য কেমন হবে – শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কেমন হবেন |

চতুর্থ গৃহ, সুখের স্থান ; সপ্তম স্ত্রী / পতির স্থান , অষ্টম হল পত্নী / পতির আয়ুষ্কাল আর সবশেষে দ্বাদশে শয্যাসুখ বিষয়ে জানা যায় |

মাঙ্গলিক দোষ কাটানোর শাস্ত্রীয় ব্যবস্থা

মুহূর্তচিন্তামণি , ভাবকুতুহলম প্রভৃতি প্রামাণ্য গ্রন্থে ভৌমদোষ কাটানোর বিধান বা উপদেশ পাওয়া যায় | শাস্ত্রমতে পিপ্পলিব্রত, সাবিত্রীব্রত ইত্যাদি নিষ্ঠাসহ পালন করে অচ্যুতমূর্তি , তুলসীগাছ , পিপ্পল বৃক্ষ বা প্রতিষ্ঠিত ঘটে সঙ্গে কন্যার বিবাহ দিতে হবে | এরপর দীর্ঘায়ু যোগ আছে এমন পাত্রের সঙ্গে ধর্মীয় নিয়ম মেনে বিবাহ দিতে হবে | অথবা সঠিক তন্ত্র মতে সিদ্ধ মাঙ্গলিক দোষ নিবারণ কবচ ব্যবহার করতে পারেন | এতে কী লাভ হবে তা আমি ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না | মাঙ্গলিক দোষ বা ভৌমদোষের প্রতিকারের একাধিক ব্যবস্থা শাস্ত্রে আছে | যথাযথ নিয়মে তা পালনে শুভ  কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যেতেই পারে |

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
বশীকরণ তন্ত্রসার 1

বশীকরণ তন্ত্রসার

দেবাদিদেব মহাদেব যাহা মহামায়া আদ্যাশক্তির নিকট কীর্তন করিয়াছিলেন, মনীষীগণ তাহাই জগতের হিতার্থে  সংসার মাঝে ব্যক্ত করিয়াছেন | শান্তিকর্ম্ম, বশীকরণ, স্তম্ভন, বিদ্বেষন, উচ্চাটন, মারণ এই সর্ববিধ

কালসর্প দোষ কাটান

কালসর্প দোষ কাটাবেন কীভাবে ?

পুরাণ মতে মহর্ষি কাশ্যপের পুত্র হলেন কেতু | লক্ষীলাভের জন্য দেবতা আর অসুররা সমুদ্র মন্থনে ব্যস্ত | কিন্তু শুভ শক্তি আর অশুভ শক্তির মিলন বা

Scroll to Top