জ্যোতিষশাস্ত্রের এক অন্যতম গ্রহ হলো শনি | শনি হল কালপুরুষের বিষাদ , যে ঘরে জন্মছকে শনি বসে সেই ঘরের গুণ বা দোষের বৃদ্ধি করে | আর একটা কথা সবসময় জেনে রাখবেন , শনি হল বিচ্ছেদাত্মক গ্রহ | যেখানে বসে তার থেকে যেখানে যেখানে শনির দৃষ্টি পড়ছে সেই ঘরের সঙ্গে যে যে সম্পর্ক জড়িত , সেগুলোতে প্রভাব ফেলে | উদহারণ হিসাবে বলি , ধরুন শনি কারোর জন্মছকে সপ্তম স্থানে রয়েছে , এটা জায়া স্থান , ব্যবসার স্থান | এখানে বসে শনির তৃতীয় দৃষ্টি পড়ছে নবমে অর্থাৎ পিতার স্থানে , ফলে পিতার সঙ্গে জাতকের সম্পর্ক খারাপ হবে | আগেই বলছি বিচ্ছেদাত্মক দৃষ্টি | যেখানে বসে আছে সেখানেও শনির প্রভাব |
শনি এক এক রাশিতে আড়াই বছর করে থাকে | আর যে রাশিতে শনি থাকে সেই রাশির আগের ঘর আর পরের ঘরকেও প্রভাবিত করে | এই তিন ঘর মিলে সময় হয় সাড়ে সাত বছর | তাই শনির সাড়েসাতি বলা হয় | এই সাড়েসাতি জনমানসে এক ভীতির কারণ , তথাপি একে এড়িয়ে আমরা কেউ যেতে পারবো না | জীবনে একবার , দুবার অনেকে আবার তিনবারও পেয়ে থাকেন , ত্রিশ বছর পর পর শনির সাড়েসাতি আসে | বারোটা রাশি ঘরতে শনির ত্রিশ বছর সময় লাগে |
শনির সাড়েসাতি এলে কী হয় ?
দেখুন আগেই বলেছি শনি হল কালপুরুষের বিষাদ , দুঃখের ফলদাতা | আর এটাও পাশাপাশি বলেছি যে শনি হল গ্রহজগতের একমাত্র যোগীগ্রহ যখনই কোনো না কোনোভাবে গোচরে আপনার রাশি বা লগ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে জানবেন , সত্যের মুখোমুখি আপনি দাঁড়াতে চলেছেন | এতদিন যা যা করেছেন তার ফল এখন পাওয়ার সময় এতদিন যে কাজে হাত দিয়েছেন সাফল্য পেয়েছেন , কোথাও কোনো অনৈতিক কাজ করেও হয়তো নিজের সুবিধা করে নিয়েছেন | যেই শনির দশায় ঢুকলেন ওসব আর হবে না |
শনির সাড়েসাতি কী শুধুই ভালো ?
উত্তর হবে – না, শনি সর্বাধিক পাপগ্রহ , তার দোষ ভালো হয় না , কিন্তু আমি এমনও দেখেছি , শনির সাড়েসাতিতেই কেউ চরম উন্নতি করেছেন | দেখুন , শনি বা যে কোনো পাপগ্রহ ততক্ষন অব্দি ক্ষতি করতে পারে না , যতক্ষণ না সে চন্দ্রকে প্রভাবিত করতে পারছে , কারণ চন্দ্র হল আমাদের মন | মন যদি প্রভাবিত হয় , তাহলে আর কাউকেই কিছু করতে হয় না | জন্মছকে যদি শনি চন্দ্র একসঙ্গে থাকে মানে বিষযোগে, চন্দ্রের ওপর শনির কোনো দৃষ্টি পড়লে , শনির সাড়েসাতি হবে খুব কষ্টদায়ক , এটা হবেই , এই জাতক খুব মানসিক যন্ত্রনায় ভুগবে | বিফলতা যত না থাকবে , সে কল্পনাতেই সব নেগেটিভিটি টেনে আনবে | আর এটাই করে শনি |
এমনিতে মকর রাশি, কুম্ভ রাশির ক্ষেত্রে সাড়েসাতি খুব একটা কষ্টদায়ী হয় না , যদি না শনি চন্দ্রের সম্পর্ক থাকে | শনি চন্দ্রের যদি কোনো সম্পর্ক জন্মছকে হয় , তাহলে কষ্ট আছে একশোভাগ আর সেই কষ্ট হবে মানসিক | রোগব্যাধি , নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু যা আপনাকে নাড়িয়ে দিতে পারে | যেমন কর্মহীন হওয়া, সম্পর্ক নষ্ট হওয়া ইত্যাদি |
শনির সাড়ে সাতি অথবা ঢাইয়াতে কী করা যেতে পারে ?
এই প্রশ্নটা অনেকের মনেই উঁকি দেবে , কারণ সাড়েসাতি তো সবার জীবনেই আসবে | এখন যেমন শনি আছে কুম্ভে, তাই এখন সাড়েসাতি চলছে মীন, মকর আর কুম্ভের | ২০২৫ – এ শনির ট্রানজিশন হলে মকরের সাড়েসাতি ছাড়বে , লাগবে মেষের কারণ তখন শনি যাবে মীনে | এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা খুব জরুরী, শনিকে অষ্টমে রেখে যে রাশি থাকবে ও চতুর্থে রেখে যে রাশি থাকবে তাদের কিন্তু ঢাইয়া চলবে | এখন যেমন ঢাইয়া চলছে কর্কট ও বৃশ্চিক রাশির | এবার আরেকটা জিনিস জেনে নিন যে রাশি থেকে শনি পঞ্চমে থাকবে তার কিন্তু চলবে পনৌতি | এই ক্ষেত্রে কিন্তু সমস্যা চরমে যেতে পারে | এখন পনৌতি চলছে তুলা রাশির |
হয়তো আপনার জন্মছকে সাড়েসাতি , ঢাইয়া , পনৌতি কিছু নেই, অথচ আপনি চরম ঝামেলার মধ্যে আছেন , বিচার করালে দেখবেন আপনার নাম রাশির এসব ঝামেলা চলছে | যে নামে আমরা পরিচিত হই, সেই নামের তো একটা প্রভাব থাকে আমাদের জীবনে , তারও রাশি থাকে | সেখানে যদি সাড়েসাতি, ঢাইয়া , বা পনৌতি চলে তাহলেও জীবনে খুব ঝামেলা পোহাতে দেখেছি |
মুক্তির উপায় কি?
আমি আগেও বলেছি আবার ও বলছি , এর উপায় শনিবার সূর্যাস্তের পর বজরংবলীর মন্দিরে যাওয়া , কিছু দক্ষিণা দিয়ে নিজের নামে সঙ্কল্প করা | এতে সাড়েসাতি , ঢাইয়া , পনৌতির দুষ্প্রভাব থেকে মুক্তি মিলবে , তবে ধীরে ধীরে | জ্যোতিষ কোনো ম্যাজিক নয় , আপনার আশীর্বাদ ঈশ্বরের থেকে আপনাকেই জোগাড় করতে হবে | আর জন্মবারে মহাদেবের মাথায় ২১ বার জলাভিষেক করুন | অথবা সঠিক তন্ত্র মতে সিদ্ধ শনি সাড়েসাতি /ঢাইয়া কবচ ব্যবহার করতে পারেন | এতে কী লাভ হবে তা আমি ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না |